কাজ, শক্তি ও ক্ষমতা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ১ম পত্র | NCTB BOOK

৬.১ সূচনা

Introduction

কাজ, শক্তি ও ক্ষমতা এ তিনটি শব্দ আমাদের অতি পরিচিত। আমরা দৈনন্দিন জীবনে কাজ শব্দটিকে শারীরিক কিংবা মানসিক যে কোন কাজের জন্য ব্যবহার করে থাকি। তাই সাধারণ অর্থে কোন কিছু করার নামই কাজ। যেমন রিকশাওয়ালা যখন রিক্সা টানে তখন সে কাজ করে। কুলি যখন মাল বহন করে তখন সে কাজ করে, ঘোড়া যখন গাড়ি টানে তখন এটি কাজ করে ইত্যাদি। এ থেকে স্পষ্ট যে কাজ শব্দটি দৈনন্দিন জীবনে কোন নির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত না হয়ে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। পদার্থবিজ্ঞানে কাজ বলতে নির্দিষ্ট একটি অর্থ বুঝায়। আবার ক্ষমতা ও শক্তি উভয়ই সাধারণভাবে একই অর্থে ব্যবহার করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা এক নয়। এ অধ্যায়ে কাজ, ক্ষমতা ও শক্তির প্রকৃত ব্যাখ্যা এবং এদের সম্পর্কিত বিভিন্ন সম্পর্ক আলোচনা করা হবে।

৬.২ কাজ Work

পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে বলের অভিমুখে যদি বস্তুটির সরণ ঘটে তবে ক্রিয়াশীল বল কাজ করেছে বুঝায়। কাজের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা দেয়া যায়।

সংজ্ঞা : কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগে বস্তুর সরণ ঘটনে প্রযুক্ত বল ও বলের অভিমুখে সরণের উপাংশের গুণফলকে কাজ বলে।

উপরের সংজ্ঞা থেকে স্পষ্ট যে কোন বস্তুর উপরে শুধু বল প্রয়োগ করলেই কাজ হয় না। যেমন একটি কাঠের গুড়ির উপর বল প্রয়োগ করা হল ; কিন্তু গুড়িটির কোন স্থানান্তর হল না। সুতরাং প্রযুক্ত বল কোন কাজ করল না। অতএব, সিদ্ধান্ত এই যে, বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে যদি বলের ক্রিয়া রেখায় ঐ বস্তুর স্থানান্তর না ঘটে, তবে কাজ সম্পাদিত হয় না।

বলের দ্বারা কাজ বা ধনাত্মক কাজ :

কাজের জন্য বলের প্রয়োজন। বল দুভাগে কাজ করতে পারে। যথা- (১) বলের দ্বারা বা বলের দিকে কাজ এবং (২) বলের বিরুদ্ধে বা বলের বিপরীত দিকে কাজ।

১। বলের দ্বারা কাজ ঃ 

যদি বল প্রয়োগে বলের প্রয়োগ বিন্দু বলের ক্রিয়ার অভিমুখে সরে যায় বা বলের দিকে সরণের ধনাত্মক উপাংশ থাকে তবে বলের দ্বারা কাজ হয়েছে বুঝায়। বলের দ্বারাকৃত কাজকে ধনাত্মক কাজ বলে।

উদাহরণ :

(ক) একটি বস্তুকে ছাদের উপর হতে নিচে ফেলা হল। এক্ষেত্রে বলের দ্বারা কাজ হল বুঝায়।

(খ) একটি ফুটবল চলন্ত অবস্থায় আছে। বল প্রয়োগ করার ফলে ফুটবলটি বলের দিকে সরে গেল। এ ক্ষেত্রেও বলের দ্বারা কাজ হয়েছে বুঝায়।

২। বলের বিরুদ্ধে কাজ বা ঋণাত্মক কাজ :

সংজ্ঞা : বল প্রয়োগের ফলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দু বলের ক্রিয়ার বিপরীত দিকে সরে যায় বা বলের দিকে সরণের ঋণাত্মক উপাংশ থাকে তবে যে কাজ সম্পাদিত হবে তাকে বলের বিরুদ্ধে কাজ বা ঋণাত্মক কাজ বলে।

উদাহরণ :

(ক) একটি বস্তুকে মাটি হতে টেবিলের উপর উঠানো হল। এক্ষেত্রে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে সরানো হল। অতএব বলের বিরুদ্ধে কাজ হয়েছে বুঝাবে। 

(খ) সমবেগে গতিশীল একটি গাড়ি ব্রেক করলে কিছুদূর গিয়ে থেমে যাবে। এক্ষেত্রে ব্রেকজনিত বল গাড়ির গতির বিপরীত দিকে ক্রিয়া করায় বলের বিরুদ্ধে কাজ হয়েছে বুঝাবে।

৬.৩ কাজের পরিমাপ (ধ্রুব বলের ক্ষেত্রে) Measurement of work (In case of constant force) 

সময়ের প্রেক্ষিতে বলের মান ও দিক পরিবর্তন না হলে তাকে ধ্রুব বল বলে।

মনে করি A বিন্দুতে অবস্থিত কোন একটি বস্তুর উপর AB বরাবর F বল প্রযুক্ত হওয়ায় বস্তুটি A বিন্দু হতে B বিন্দুতে যেতে s দূরত্ব অতিক্রম করল । চিত্র ৬১ (ক)]। তা হলে, 

কৃত কাজ = বলের মান × বলের ক্রিয়া রেখা বরাবর সরণের মান

বা, W=F × s

যদি বল প্রয়োগের ফলে বস্তুর তথা বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ, বলের বিপরীত দিকে AB = s হয় [চিত্র ৬১ (খ)] তবে,

কৃত কাজ = বলের মান x বলের ক্রিয়া রেখা বরাবর সরণের মান

W= F × ( — s ) = - F × s 

ঋণ চিহ্ন বল ও সরণ বিপরীতমুখী বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।

এবার মনে করি একটি বস্তুর উপর F পরিমাণ বল AB অভিমুখে প্রযুক্ত হওয়ায় বস্তুটি বলের অভিমুখের সাথে θ কোণ উৎপন্ন করে s পরিমাণ দূরত্ব সরে C বিন্দুতে পৌঁছল[ চিত্র ৬.১ (গ) ]। তা হলে বলের ক্রিয়ারেখা বরাবর বস্তুর সরণ = AB = s cosθ

চিত্র : ৬.১

এখানে BC ι AB,

কৃত কাজ, W= বলের মান × বলের ক্রিয়া রেখা বরাবর সরণের মান

বা, W = Fs cosθ

         = বলের মান x বলের দিকে সরণের উপাংশের মান। 

         = সরণের মান × সরণের দিকে বলের উপাংশের মান।

ভেক্টর বীজগণিতের সাহায্যে কাজকে নিম্নলিখিতভাবে প্রকাশ করা যায় :

কাজকে বল ও সরণ এই দুটি ভেক্টর রাশির স্কেলার গুণফল দ্বারা পরিমাপ করা হয়। 

মনে করি, বল F একটি ভেক্টর বা দিক রাশি এবং সরণ s একটি ভেক্টর বা দিক রাশি। 

অতএব, কাজ=  বল × সরণ

  বা, W=F·s=s·F=Fs cosθ    [s   হল বল F-এর দিকে সরণের উপাংশ বা অংশক]

(ক) θ = 0° হলে, অর্থাৎ বলের দিকে যখন বস্তুর সরণ হয়, তখন

W=F·s=s·F=Fs cosθ

এখানে কাজ ধনাত্মক (positive)। এক কথায় ও সূক্ষ্মকোণ হলে কাজ ধনাত্মক। কাজ ধনাত্মক হলে বলের দ্বারা কাজ বুঝায় ।

(খ) θ =90° হলে

W=Fs cosθ=Fs cos90°

(গ) θ = 180° হলে কাজ ঋণাত্মক (negative) হবে।

কাজ ঋণাত্মক হলে বলের বিরুদ্ধে কাজ বুঝায় । 

উপরের সমীকরণগুলো হতে সিদ্ধাস্ত করা যায় যে, বল প্রয়োগের ফলে যদি বনের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ ঘটে তবেই কাজ সাধিত হবে। এটিই কাজের শর্ত।

কাজ দুটি দিক রাশি  Fs এর ডট বা স্কেলার গুণফল। এটি একটি স্কেলার রাশি। কাজের শুধুমাত্র মান রয়েছে।

কতকগুলো বল যদি একসাথে বস্তুর উপর কাজ করে, তবে প্রতিটি বল দ্বারা কাজের পরিমাণ পৃথক পৃথকভাবে নির্ণয় করে সবগুলোকে একত্রে যোগ করে মোট কাজের পরিমাণ পাওয়া যায়। অর্থাৎ মোট কাজের পরিমাণ।

W = w1 + w2 + w3 +…….. + wn

শূন্য-কাজ :

কাজ পরিমাপের সংজ্ঞা এবং সমীকরণ অনুসারে বল প্রয়োগের ফলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ না ঘটে,

তবে কাজ W= 0।

সুতরাং শূন্য কাজের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা দেয়া য়ায়।

সংজ্ঞা ঃ বল প্রয়োগের ফলে যদি বস্তুর সরণ না হয় (s = 0), অর্থাৎ বলের প্রয়োগ বিন্দু স্থির থাকে অথবা প্রয়োগ বিন্দু বলের উল্লম্ব অভিমুখে (θ = 90°) সরে যায়। তবে বলের দ্বারা শূন্য কাজ হয়েছে বুঝাবে ।

 উদাহরণ :

(ক) একজন লোক একটি ভারী বাক্স মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে লোকটি কোন কাজ করছে না, কারণ বাক্সটির কোন সরণ নেই ।

(খ) স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কেটে স্থির থাকলে কোন কাজ করা হয় না।

(গ) একটি বস্তু দড়িতে বেঁধে বৃত্তাকার পথে ঘুরালে কোন কাজ হবে না। কেননা প্রতি মূহূর্তে বস্তুটির বেগ বা সরণ বস্তুর অবস্থান বিন্দু হতে বৃত্তের স্পর্শক বরাবর এবং বলের দিক কেন্দ্রমুখী। অর্থাৎ কেন্দ্রমুখী বল ও সরণের অন্তর্ভুক্ত কোণ 90°। সুতরাং, কেন্দ্রমুখী বল দ্বারা কৃত কাজ শূন্য।

কাজ শূন্য হওয়ার শর্ত ঃ

আমরা জানি, 

কাজ W = F . s = Fs cos θ

উপরের সমীকরণের ডানপাশে Fs ও cos θ তিনটি রাশি রয়েছে। এদের যে কোন একটি শূন্য হলে ডানপক্ষ অর্থাৎ কাজ শূন্য হবে।

(ক) যদি বস্তুতে বল প্রয়োগ না করা হয় তবে কাজ W = 0 হবে। 

(খ) বল প্রয়োগ করার ফলে যদি বস্তুর সরণ না ঘটে, তবে W= 0 হবে।

(গ) যদি cos θ = 0 হয়, অর্থাৎ θ = 90° হয়, তবে w = 0 হবে। এ অবস্থা ঘটবে যখন বল F ও সরণ s-এর মধ্যবর্তী কোণ 90° হবে।

৬.৪ বলের দ্বারা কাজ ও বলের বিরুদ্ধে কাজের পার্থক্য Distinction between work done by and against a force

অথবা, ধনাত্মক কাজ ও ঋণাত্মক কাজের পার্থক্য Distinction between positive and negative work

 

বলের দ্বারা কাজবলের বিরুদ্ধে কাজ
১। যদি বল প্রয়োগের ফলে বলের দিকে বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ ঘটে বা বলের দিকে সরণের ধনাত্মক উপাংশ থাকে তবে ঐ সরণের জন্য কৃতকাজকে বলের দ্বারা কাজ বলে।১। যদি বল প্রয়োগের ফলে বলের বিপরীত দিকে বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ ঘটে বা বলের দিকে সরণের ঋণাত্মক উপাংশ থাকে তবে ঐ সরণের জন্য কৃতকাজকে বলের বিরুদ্ধে কাজ বলে।
২। বলের দ্বারা কাজ ধনাত্মক রাশি।২। বলের বিরুদ্ধে কাজ ঋণাত্মক রাশি।
৩। বলের দ্বারা কাজ হলে বস্তুতে ত্বরণের সৃষ্টি হয়।৩। বলের বিরুদ্ধে কাজ হলে বস্তুর উপর মন্দন সৃষ্টি হয়।
৪। বলের দ্বারা কাজ হলে স্থিতিশক্তি হ্রাস পায়।৪। বলের বিরুদ্ধে কাজ হলে স্থিতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
৫। বলের দ্বারা কাজ হলে গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।৬। বলের বিরুদ্ধে কাজ হলে গতিশক্তি হ্রাস পায়।
৬। বলের দ্বারা কাজের ক্ষেত্রে 90° < θ <0°৬। বলের বিরুদ্ধে কাজের ক্ষেত্রে 180°> θ < 90° ।

 

৬.৫ কাজের একক ও মাত্রা সমীকরণ

Unit and dimension of work

কাজের একক আলোচনা করার আগে একক কাজ কি তা জানা দরকার। কোন বস্তুর উপর একক বল প্রয়োগে বলের ক্রিয়ারেখা বরাবর যদি বস্তুর একক সরণ হয়, তবে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়, একক কাজ বলে ।

এস. আই. বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতি : 

এ পদ্ধতিতে কাজের পরম একক হল জুল (Joule)। এক নিউটন বল প্রয়োগের ফলে বলের ক্রিয়া রেখা বরাবর বস্তুর সরণ যদি এক মিটার হয়, তবে যে কাজ সম্পন্ন হয় তাকে এক জুল বলে। 

:- 1 জুল = 1 নিউটন × 1 মিটার।

তাৎপর্য : ধরা যাক 50J পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

এখন, 50J = 50 N x 1m = 1N × 50m = 5N × 10m ইত্যাদি।

সুতরাং, 50J কাজ সম্পাদন বলতে বুঝায় 50 N বল প্রয়োগ করে বলের দিকে 1 m সরণ ঘটান বা 1 N বল প্রয়োগ করে 50 m সরণ ঘটান; কিংবা 5N বল প্রয়োগ করে 10m সরণ ঘটান ইত্যাদি।

পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানে কাজ পরিমাপের জন্য ইলেকট্রন ভোল্ট (eV) নামে পরিচিত একটি সুবিধাজনক একক ব্যবহার করা হয়। এক ভোল্ট বিভব পার্থক্যে একটি ইলেকট্রনের অর্জিত শক্তিই এক ইলেকট্রন ভোল্ট ।

1eV = 1.6 x 10-19 জুল।

বিদ্যুৎবিজ্ঞানে কাজের আর একটি ব্যবহারিক একক আছে। এর নাম কিলোওয়াট-ঘণ্টা (K. W. H.)। 

এক কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কোন উৎস এক ঘণ্টায় যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে তাকে এক কিলোওয়াট-ঘণ্টা বলে।

কাজের মাত্রা সমীকরণ :

কাজের মাত্রা সমীকরণ : [W] = [বল ] x [সরণ] = [MLT-2] [L] = [ML2T-2]।

৬.৬ অভিকর্ষীয় কাজ 

   (Gravitational Work)

   অভিকর্ষ বলের দরুন কৃত কাজ :

(১) মনে করি 'm' ভরবিশিষ্ট একটি বস্তুকে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ‘h’ উচ্চতা হতে ফেলা হল।

কৃত কাজ = বল x সরণ

 বা, W= F × h=mgh  [:- F = mg]

 বা, W = ভর x অভিকর্ষীয় ত্বরণ × উচ্চতা

অভিকর্ষ বলের দিক নিচের দিকে এবং এক্ষেত্রে সরণ ও নিচের দিকে। অর্থাৎ, বল ও সরণ একই দিকে হওয়ায় কাজ ধনাত্মক।

(২) ‘m’ ভরবিশিষ্ট একটি বস্তুকে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে ‘h’ উচ্চতা উপরে উঠালে 

কৃত কাজ = ভর x অভিকর্ষীয় ত্বরণ x উচ্চতা      [বা, W= mgh]

এক্ষেত্রে বল ও সরণ বিপরীত দিকে হওয়ায় এই কাজ ঋণাত্মক।

(৩) মনে করি 'm' ভরবিশিষ্ট একটি বস্তু কোন একটি মসৃণ নততল বেয়ে A হতে B-তে সরে এল। যদি g অভিকর্ষীয় ত্বরণ হয়, তবে অভিকর্ষ বল mg বস্তুটিকে খাড়াভাবে নিচের দিকে টানবে।

ধরি সরণের অভিমুখ এবং অভিকর্ষ বলের অভিমুখের মধ্যে ও কোণ আছে এবং AB = s

 অভিকর্ষ বল mg-এর দিকে সরণের অংশ = s cos θ

যদি তল না থাকত তবে বস্তুটি যে সময়ে A হতে B-তে যায়, সে সময়ে তা AC = h দূরত্ব নিচে নামত ।

h = s cos θ

কৃত কাজ, W=mgs cos θ বা, W=mgh

তলটি অনুভূমিকের সাথে x কোণে অবস্থান করলে, θ = ( 90° – α)

 

Content added || updated By

সংরক্ষণশীল ও অসংরক্ষণশীল বল

সংরক্ষণশীল বল

সংজ্ঞা : কোনো কণা একটি পূর্ণচক্র সম্পন্ন করে তার আদি অবস্থানে ফিরে আসলে কণাটির উপর যে বল দ্বারা সম্পাদিত কাজের পরিমাণ শূন্য হয়, সেই বলকে সংরক্ষণশীল বল বলে।

ব্যাখ্যা : কোনো কণার একটি বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে যাওয়ার সময় কোনো বল দ্বারা কৃতকাজ যদি ধনাত্মক হয় এবং দ্বিতীয় বিন্দু থেকে প্রথম বিন্দুতে আসার সময় যদি ঐ বল দ্বারা কৃতকাজ পূর্বের কাজের সমান ও ঋণাত্মক হয়, তাহলে এ পূর্ণ চক্রে মোট কাজ শূন্য হয়। এই বলকে সংরক্ষণশীল বল  বলা হয়।

কোনো একটি কণার এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে যাওয়ার সময় যদি কোনো বল দ্বারা কণাটির উপর সম্পাদিত কাজের পরিমাণ কণাটির গতিপথের উপর নির্ভর না করে কেবল বিন্দু দুটির অবস্থানের উপর নির্ভর করে তাহলে সেই বলটি সংরক্ষণশীল হয়।

উদাহরণ :  অভিকর্ষ বল

অসংরক্ষণশীল বল

সংজ্ঞা :অসংরক্ষণশীল বল  হল এমন একটি বল যা কাজের পরিমাণ নির্ভর করে পথের উপর। অর্থাৎ, যদি আপনি একটি বস্তুকে একটি নির্দিষ্ট পথে সরান, তবে সেই পথে কাজ করা বলের পরিমাণ পরিবর্তিত হবে। উদাহরণস্বরূপ, ঘর্ষণ বল একটি অসংরক্ষণশীল বল, কারণ এটি বস্তুটির গতির উপর নির্ভর করে এবং এটি কাজের পরিমাণকে পরিবর্তন করে।

ব্যাখ্যা :অসংরক্ষণশীল বলের উদাহরণ হিসেবে ঘর্ষণ বল ছাড়াও বায়ুর প্রতিরোধক বল এবং টানেল বলও উল্লেখ করা যায়। এই ধরনের বলগুলি সাধারণত শক্তির রূপান্তর ঘটায় এবং সিস্টেমের মোট শক্তি কমিয়ে দেয়।

যখন একটি বস্তুকে ঘর্ষণের মাধ্যমে সরানো হয়, তখন ঘর্ষণ বল কাজের পরিমাণকে কমিয়ে দেয় এবং এর ফলে বস্তুটির গতির পরিবর্তন ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গাড়ি যখন ব্রেক করে, তখন ঘর্ষণ বল গাড়ির গতিকে ধীর করে দেয় এবং শক্তি তাপের রূপে ক্ষয় হয়।

অন্যদিকে, সংরক্ষণশীল বল  যেমন গুরুত্ব বল বা ইলেকট্রিক বল, কাজের পরিমাণ নির্ভর করে শুধুমাত্র শুরু এবং শেষ অবস্থানের উপর, পথের উপর নয়।

অসংরক্ষণশীল বলের কারণে শক্তির ক্ষতি হতে পারে, যেমন তাপের রূপে।

উদাহরণ : ঘর্ষণ বল

Content added By

পদার্থবিজ্ঞানে, ক্ষমতা হলো প্রতি একক সময়ে স্থানান্তরিত বা রূপান্তরিত শক্তির পরিমাণ। আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতিতে, ক্ষমতার একক হলো ওয়াট, যা প্রতি সেকেন্ডে এক জুলের সমান। আগেকার দিনের আলোচনায়, ক্ষমতাকে কখনও কখনও কার্যকলাপও বলা হতো। ক্ষমতা একটি স্কেলার পরিমাপ।

Content added By
15 সেকেন্ডে 1 জুল কাজ
5 সেকেন্ডে 3 জুল কাজ
3 সেকেন্ডে 5 জুল কাজ
1 সেকেন্ডে 15 জুল কাজ
লেন্সটি উত্তল ও ফোকাস দূরত্ব 5 cm
লেন্সটি অবতল ও ফোকাস দূরত্ব 5 cm
লেন্সটি উত্তল ও ফোকাস দূরত্ব 20 cm
লেন্সটি অবতল ও ফোকাস দূরত্ব 20 cm
Please, contribute to add content into কর্মদক্ষতা.
Content

পরিবর্তনশীল বল কর্তৃক কৃত কাজের সমীকরণ

৬.৫ অনুচ্ছেদে অভিকর্ষীয় কাজ আলোচনা করার সময় বল1 অপরিবর্তনশীল ধরা হয়েছে। স্বল্প উচ্চতায় বলের পরিবর্তন খুবই নগণ্য। কিন্তু পৃথিবী পৃষ্ঠের বেশ উপরের দিকে কিংবা নিচের দিকে অভিকর্ষীয় বলের মান কমতে থাকে। সেক্ষেত্রে বা ধ্রুব ধরা যায় না। বল একটি ভেক্টর রাশি; সুতরাং এর দিক ও মান উভয়ই আছে। প্রথমে বলে মান পরিবর্তনশীল বিবেচনা করে আমরা নিম্নে কৃত কাজের সমীকরণ বের করব।

(ক) বলের মান যখন পরিবর্তনশীল : ধরি কোন একটি পরিবর্তনশীল বল  F ঐ বস্তুর উপর X-অক্ষ বরাবর ক্রিয়া করায় বস্তুটি X-অক্ষ বরাবর X1 অবস্থান থেকে X2 অবস্থানে সরে গেল এবং বলটি মানের সাপেক্ষে পরিবর্তী। এই পরিবর্তী বল দ্বারা বস্তুটির সরণ (x2 – x1) ঘটাতে সম্পাদিত কাজ নিম্নোক্ত উপায়ে বের করতে পারি ।

 এখন মোট সরণ (X2 - X1 ) কে বহুসংখ্যক অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমমানের সরণ x-এ বিভক্ত করা হল [চিত্র ৬.৩ (ক)]।

চিত্র : ৬.৩

ফলে প্রতিটি ক্ষুদ্র সরণের শুরুতে বস্তুর উপর যে বল ক্রিয়া করে ঐ বলের ক্রিয়াতেই ঐ Trip সংঘটিত হয়েছে বিবেচনা করা যায়। প্রতিটি ক্ষুদ্র অংশে ক্রিয়ারত বল ভিন্ন ভিন্ন মানের। সুতরাং x1, অবস্থান থেকে x2x পর্যন্ত ক্ষুদ্র সরণের ক্ষেত্রে F1 বল ক্রিয়াশীল হলে কৃত কাজ,

W1 = F1 x

অনুরূপভাবে x1x থেকে x1 +2 x পর্যন্ত সরণ x-এর ক্ষেত্রে F2 বল ক্রিয়াশীল হলে কৃত কাজ,

W2 = F2 x

মোট সরণ (x2 – x1 ) কে যদি এরূপ N সমসংখ্যক ক্ষুদ্র সরণ x-এ বিভক্ত করা হয় তবে মোট কাজ হবে এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশের সরণের জন্য কাজের সমষ্টির সমান।

কৃত কাজ, W = W1+ W2 + W3 +……+ Wn

লক্ষণীয় যে প্রতিটি ক্ষুদ্র অংশ x-এ বলের মান ধ্রুব ধরা হয়েছে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। ঐ প্রতিটি ক্ষুদ্র অংশকে যদি আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করি।[ চিত্র ৬.৩ (খ)] এবং নব ক্ষুদ্র অংশের জন্য বল ধ্রুব ধরি, তবে কৃত কাজের মান আরও সঠিক হবে। এভাবে ক্ষুদ্র অংশ আরও ক্ষুদ্র অর্থাৎ x যদি প্রায় শূন্যের কাছাকাছি হয় এবং বিভক্ত অংশের সংখ্যা N-কে অসীম করা হয়। তবে সঠিক মান পাওয়া যাবে। অতএব, কাজের সঠিক মান লেখা যায় ।

ক্যালকুলাসের ভাষায়,

চিত্র : ৬.৪

 

(খ) বলের মান ও দিক উভয়ই যখন পরিবর্তনশীল : বল মানে ও অভিমূখে পরিবর্তনশীল হলে ঐ বলের ক্রিয়ায় বস্তু একটি রেখায় গতিশীল হতে পারে। বস্তুটির গতি দ্বিমাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক। এ ক্ষেত্রে রেখাটির কোন বিন্দুতে অংকিত স্পর্শক দ্বারা ঐ বিন্দুতে বস্তুর গতি অভিমুখ নির্দিষ্ট হবে। এক্ষেত্রে সরণ = r । 

চিত্র : ৬.৫

 

কাজেই এই প্রকার বলের কৃত কাজ নির্ণয়ে সমগ্র গতিপথকে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সরণ  dr -এর সমষ্টি হিসেবে গণ্য করা যায়।

প্রত্যেক ক্ষুদ্র সরণের শুরুতে বস্তুর উপর যে বল F ক্লিয়ারত থাকে ঐ বল উক্ত সরণের জন্য অপরিবর্তী -> বিবেচনা করা যায়। ধরি কোন একটি ক্ষুদ্র সরণ  dr এবং ঐ সরণের জন্য ক্রিয়ারত বল F -এর মধ্যবর্তী কোণ ও বলটিকে  dr  বরাবর একটি অংশে এবং তার লম্ব দিকে অপর একটি অংশে বিভক্ত করি। ধরি অংশক দুটি যথাক্রমে-

Fr = Fs cosθ এবং Fn = F sinθ

এই ক্ষুদ্র সরণের জন্য বলের Fn অংশক কর্তৃক কৃত কাজ শূন্য, কেননা এই ক্ষুদ্র সরণ ও Fn-এর মধ্যবর্তী কোণ 90° । তা হলো ঐ ক্ষুদ্র সরণের জন্য কৃত কাজ।

 

৬.৮ পরিবর্তনশীল বল কর্তৃক কৃত কাজের উদাহরণ 

Examples of work done by variable force

(ক) স্প্রিং প্রসারণে সম্পাদিত কাজ

মনে করি একটি অনুভূমিক আদর্শ স্প্রিং-এর এক প্রান্ত দেয়ালের সাথে আটকিয়ে অপর প্রান্তে m ভরের একটি বস্তু যুক্ত রয়েছে। বস্তুটি অনুভূমিক এবং ঘর্ষণবিহীন তলের উপর দিয়ে চলাচল করতে পারে।

চিত্র : ৬.৬

বস্তুটিকে টেনে স্প্রিং S-কে দৈর্ঘ্য বরাবর বিকৃত করলে স্থিতিস্থাপক ধর্মের দরুন প্রযুক্ত বলের বিপরীত স্প্রিং-এ প্রত্যায়নকারী বলের উদ্ভব হবে। স্থিতিস্থাপক সীমা অতিক্রম না করলে, প্রত্যায়নী বলের মান হুকের সূত্রানুযায়ী দৈর্ঘ্য পরিবর্তনের সমানুপাতিক হবে।

মনে করি Fs, অনুভূমিক বল প্রয়োগে বস্তুটিকে বাম হতে ডান দিকে সরানোর ফলে এর দৈর্ঘ্য অনুভূমিক বরাবর x পরিমাণ বৃদ্ধি পেল। এই ক্রিয়ার দরুন স্প্রিং-এ – kx পরিমাণ প্রত্যায়নী বল উৎপন্ন হবে। কেননা

Fsx

বা, Fs=kx  

[এই প্রত্যায়নী বলের দিক বস্তুটির সরণের বিপরীত দিকে হওয়ায় ঋণাত্মক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছে। ]

এখানে k একটি ধ্রুব সংখ্যা। একে স্প্রিং ধ্রুবক (spring constant) বলা হয়।

স্প্রিংটকে প্রসারিত করতে হলে সমমানের বাহ্যিক বল প্রয়োগ করতে হবে। মনে করি প্রযুক্ত বল F। 

F=Fs=(kx)=kx

স্প্রিংটিকে x1 অবস্থান হতে x2 অবস্থানে প্রসারিত করতে প্রযুক্ত বল কর্তৃক সম্পাদিত কাজের পরিমাণ

এই কাজ ধনাত্মক। সাধিত কাজ স্প্রিং-এর মধ্যে স্থিতিশক্তি হিসেবে সঞ্চিত থাকে। স্প্রিং-এর আদি অবস্থান x1 = 0 এবং শেষ অবস্থান x2 = x ধরলে,

  W = 12 x2

অর্থাৎ, সরণের পরিমাণ x হলে সঞ্চিত স্থিতিশক্তির পরিমাণ হবে 12kx2। 

(খ) মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে কৃত কাজ

আমরা জানি কোন একটি বৃহদাকার গুরুভার বস্তুর চারদিকে যে স্থান জুড়ে এর আকর্ষণ বল অনুভূত হয়, সেই স্থানকে উক্ত বস্তুর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র বলে।

মনে করি একটি গুরুভার বস্তুর ভর M এবং এর ভারকেন্দ্র O।  O হতে r দূরত্বে Q বিন্দুতে m ভরের একটি বস্তু স্থাপন করি। অতএব OQ = r । মহাকর্ষীয় সূত্র হতে বস্তু দুটির মধ্যে মহাকর্ষীয় বল

  F1=GMmr2

এই বল QO রেখা বরাবর ক্রিয়া করে। Q হতে dr দূরত্বে R একটি বিন্দু বিবেচনা করি। অতএব OR = r + dr_যেহেতু Q ও R বিন্দু দুটি খুবই কাছাকাছি, সেহেতু এই দূরত্বের মধ্যে F1 ধ্রুব ধরা যায় । ছোট

চিত্র : ৬.৭

বস্তুটিকে Q হতে R বিন্দুতে নিতে বাইরের কোন উৎসকে মহাকর্ষীয় বলের বিপরীত দিকে সমপরিমাণের একটি বল প্রয়োগ করতে হবে। ধরি এই বল F2

:-  F2=GMmr2

এই বল Q হতে R বিন্দুর দিকে ক্রিয়া করবে।

এখন, ছোট বস্তুটিকে Q হতে R বিন্দুতে নিতে বাইরের উৎস কর্তৃক কৃত কাজ

dW=F2·dr=F2dr

বা, dW=GMmr2dr

ছোট বস্তুটিকে P হতে S বিন্দুতে নিতে কৃত কাজ

=GMm1r11r2

=GMm1r11r2

অর্থাৎ W =GMm1r11r2

উক্ত সমীকরণ হতে দেখা যাচ্ছে যে বাইরের উৎস কর্তৃক মহাকর্ষীয় বলের বিপরীতে কাজ ধনাত্মক।

 

Content added || updated By

কোন ব্যক্তি, বস্তু বা পদার্থের কাজ করার সামর্থ্য বা ক্ষমতাকে এর শক্তি বলে। একটি বস্তু এই শক্তি তার আপেক্ষিক অথবা পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা অবস্থানের সাপেক্ষে অথবা গতির দরুন অর্জন করতে পারে। বিশেষ অবস্থায় বস্তু মোট যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে পারে, তা দ্বারাই শক্তি পরিমাপ করা হয়। যার কাজ করার সামর্থ্য যত বেশি তার শক্তিও তত বেশি। আর যার কাজ করার সামর্থ্য যত কম তার শক্তিও তত কম। অতএব বলা যায় কাজ শক্তির মাপকাঠি। যদি বলা হয় কোন বস্তু W পরিমাণ কাজ করল, তবে বুঝতে হবে যে, তার ব্যয়িত শক্তির মান W।

মোটর ইঞ্জিনে পেট্রোলের বাষ্প, বাষ্পীয় ইঞ্জিনে জলীয় বাষ্পের চাপ পিস্টনকে চালায়। সুতরাং বাষ্পের শক্তি আছে। বিদ্যুতেরও শক্তি আছে। এই শক্তিতেই ট্রেন, ট্রাম, কল-কারখানা চলে। শক্তি আছে বলেই এই মহাবিশ্ব চলছে। শক্তির অভাবে জগৎ অচল।

যখন কোন বস্তু বলের বিরুদ্ধে কাজ করে, তখন তা শক্তি হারায়। আবার কোন বস্তুর উপর বল ক্রিয়া করলে তা শক্তি লাভ করে।

শক্তির একক ও মাত্রা সমীকরণ (Unit and dimension of energy)

কাজ দ্বারাই শক্তির পরিমাপ করা হয় অর্থাৎ কাজই শক্তির মাপকাঠি। অতএব কাজ এবং শক্তির একক ও মাত্রা সমীকরণ সম্পূর্ণ অভিন্ন।

শক্তিকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যথা-

(১) যান্ত্রিক শক্তি (Mechanical energy) 

(২) তাপ শক্তি (Heat energy) 

(৩) শব্দ শক্তি (Sound energy) 

(৪) আলোক শক্তি (Light energy) 

(৫) চুম্বক শক্তি (Magnetic energy) 

(৬) বিদ্যুৎ শক্তি (Electric energy) 

(৭) রাসায়নিক শক্তি (Chemical energy) 

(৮), পারমাণবিক শক্তি (Atomic energy) 

(৯) সৌরশক্তি (Solar energy)।

যান্ত্রিক শক্তি : 

কোন বস্তুর মধ্যে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা অবস্থানের সাপেক্ষে অথবা গতির জন্য কাজ করার সামর্থ্য তথা শক্তি থাকে, তবে ঐ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তি বলে।

এই অধ্যায়ে আমরা যান্ত্রিক শক্তি আলোচনা করব। এটি প্রধানত দুই প্রকার; যথা- 

( ১ ) গতিশক্তি (Kinetic energy)। একে সংক্ষেপে K. E. লেখা হয় এবং

(২) বিভব বা স্থিতিশক্তি (Potential energy)।

৬.১০ গতিশক্তি

Kinetic energy

সংজ্ঞা : গতিশক্তির অর্থ গতিজনিত শক্তি, অর্থাৎ গতিশীল অবস্থা থাকার ফলে কোন একটি বস্তু কাজ করার জন্য যে সামর্থ্য অর্জন করে তাকে ঐ বস্তুর গতিশক্তি বলে।

রাইফেলের একটি গুলি লক্ষ্যবস্তুতে সজোরে আঘাত করার পর তা বস্তুর বাধা অতিক্রম করে খানিকটা ঢুকে যায়। অর্থাৎ গুলি কিছু কাজ করে। গুলি যতক্ষণ বন্দুকের ভিতর থাকে ততক্ষণ তার এই কাজ করার সামর্থ্য থাকে না।

কাজেই বুঝা যায় গুলি এই কাজ করার সামর্থ্য অর্থাৎ শক্তি অর্জন করে গতি হতে। বায়ুর গতির দিকে নৌকা চালালে তার গতি বৃদ্ধি পায় এবং বিপরীত দিকে চালালে তার গতি হ্রাস পায়। নৌকা পানির বাধা অতিক্রম করার শক্তি সংগ্রহ করে গতি হতে।

আরও সংক্ষেপে বলা যায়, গতির জন্য বস্তুতে যে শক্তির উদ্ভব হয় তাকে তার গতিশক্তি বলে।

দোলায়মান দোলক, ঘূর্ণায়মান ফ্লাই হুইল, নিক্ষিপ্ত তীর, চলন্ত ফুটবল, প্রচণ্ড ঝড়, চলন্ত সাইকেল ইত্যাদি সকলের শক্তিই পতিশক্তি। কোন গতিশীল বস্তু গতিতে থাকাকালীন অর্থাৎ স্থিতিতে আসার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে তা দ্বারা তার গতিশক্তি পরিমাপ করা হয়। 

গতিশক্তির পরিমাপ (Measurement of KE) :

রৈখিক গতির ক্ষেত্রে : গতিশীল বস্তু স্থিতিতে আসার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে তাই গতিশক্তির পরিমাপ ।

মনে করি, 'm' ভরবিশিষ্ট একটি বস্তু AB বরাবর বেগে চলছে। গতির বিপরীত দিকে BA বরাবর তার উপর F পরিমাণ ধ্রুব বল প্রয়োগ করা হল। এতে সম-মন্দনের সৃষ্টি হবে। মনে করি, সম-মন্দন = a এবং বস্তুটি A হতে s দূরত্ব অতিক্রম করার পর B বিন্দুতে এসে থেমে গেল। এ ক্ষেত্রে শেষ বেগ = 0.

চিত্র : ৬.৮

গতিশক্তি

 = স্থিতিতে আসার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কৃত কাজ 

  = বল × স্থিতিতে আাসার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত অতিক্রান্ত দূরত্ব

  = F × s 

নিউটনের ২য় গতি সূত্র হতে আমরা জানি, 

  বল = ভর x ত্বরণ বা মন্দন

  F = ma

বর্ণনা অনুসারে, 0 = v2 -2as

    বা, 2as = v2

উপরের সমীকরণে F এবং s-এর মান বসিয়ে আমরা পাই,

গতিশক্তি  =ma×v22a=12mv2

বা, K. E. =12mv2

উপরের সমীকরণ হতে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে,

(ক) কোন মুহূর্তে বস্তুর গতিশক্তি (K. E.) = ঐ মুহূর্তে বস্তুর বেগের বর্গ ও ভরের গুণফলের অর্ধেক। 

(খ) নির্দিষ্ট ভরের কোন বস্তুর গতিশক্তি K. E.  12. অর্থাৎ বেগের বর্গের সমানুপাতিক কেননা m ধ্রুব ।

(গ) গতিশক্তি =12 (ভরবেগ)/ভর

ক্যালকুলাস পদ্ধতি :

 ধরা যাক, m ভরের একটি বস্তুর উপর নির্দিষ্ট দিকে F বল প্রয়োগ করে গতিশীল করা হয়। বলের দিক অপরিবর্তী, কিন্তু মান পরিবর্তনশীল। বস্তুটির সরণ X-অক্ষ বরাবর।

বস্তুর সরণ ঘটার ফলে বল দ্বারা মোট কৃত কাজ

=12mv2

W=Fdx=madx   =madx

ত্বরণ a-কে লেখা যায়,

a=dvdt=dvdxdxdt=dvdxv=vdvdx

W=mvdvdxdx=mvdv

ধরা যাক, বস্তুতে ক্রিয়াশীল বল বস্তুটির বেগ 0 হতে ৮-তে উন্নীত করে।

অতএব, W=m0vvdv=mv22v0

=mv22=12mv2

এই কৃত কাজই হচ্ছে বস্তুটির গতিশক্তি।

Ek=12mv2

গতিশক্তি ও ভরবেগের সম্পর্ক :

m ভরের একটি বস্তু বেগে গতিশীল হলে এর ভরবেগ, P = mv

এবং গতিশক্তি Ek=12mv2

এটিই গতিশক্তি ও ভরবেগের সম্পর্ক।

 

৬.১১ কাজ-শক্তি উপপাদ্য

কোন বস্তুর উপর ক্লিয়ারত লখি বল কর্তৃক কৃত কাজ তার গতিশক্তির পরিবর্তনের সমান। নিম্নোক্ত দুটি সমীকরণের সাহায্যে কাজ শক্তি উপপাদ্য প্রমাণ করা হবে। একটি হল শক্তি লাভ (Gain of energy) আর অপরটি হল শক্তি ক্ষয় ( Loss of energy)। সমীকরণ দুটি সাধারণভাবে কাজ শক্তি উপপাদ্য নামে পরিচিত।

    (১) শক্তি লাভ : 

মনে করি 'm' ভরবিশিষ্ট একটি বস্তু 'v0' আদি বেগে চলছে। গতির দিকে নির্দিষ্ট মানের একটি বল F বস্তুর উপর প্রয়োগ করলে বস্তুর বেগ বৃদ্ধি পাবে। ফলে বস্তু শক্তি লাভ করবে। মনে করি দূরত্ব অতিক্রম করার পর শেষ বেগ 'v' হল। তা হলে কৃত কাজ, W= F × s। 

বল কর্তৃক সৃষ্ট ত্বরণ, a=Fm=v2v022s 

বা, F=ma=mv2v022s  

কৃত কাজ,  W=F×s=mv2v022s×s=12m(v2v02)

 W=12mv212mv02

   = শেষ গতিশক্তি – আদি গতিশক্তি।

বলের দ্বারা কৃত কাজ - শক্তি লাভ - গতিশক্তির পরিবর্তন

(২) শক্তি ক্ষয় ঃ মনে করি, 'm' ভরবিশিষ্ট একটি বস্তু ' ' আদি বেগে চলছে। গতির বিপরীত দিকে নির্দিষ্ট মানের বল প্রয়োগ করলে তার বেগ কমবে এবং বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে বস্তু শক্তি হারাবে। গতির বিপরীতে F বল প্রয়োগে মন্দন হলে এবং 5 দূরত্ব অতিক্রমের পর বস্তুর বেগ হলে, মন্দনের ক্ষেত্রে,

a=v02v22s

কাজেই কৃত কাজ, W=Fs=ma×s=mv02v22

W=12mv0212mv2

বলের বিরুদ্ধে কৃত কাজ = শক্তি ক্ষয়

 = আদি গতিশক্তি – শেষ গতিশক্তি

কৃত কাজ = গতিশক্তির পরিবর্তন

সুতরাং কোন বস্তুর উপর ক্রিয়ারত লম্বি বল কর্তৃক কৃত কাজ তার গতিশক্তির পরিবর্তনের সমান। এটি ‘কাজ-শক্তি উপপাদ্য' নামে পরিচিত। সমীকরণ (23) ও (24) উপপাদ্যটি প্রমাণ করে।

 

Content added || updated By

স্থিতিশক্তি বা বিভব শক্তি

স্থিতিশক্তির দুটি সংজ্ঞা দেওয়া যেতে পারে :

 (১) স্থিতিশক্তির অর্থ স্থিতিজনিত শক্তি অর্থাৎ নির্দিষ্ট অবস্থানে বা অবস্থায় স্থিতিশীল থাকার দরুন বস্তু যে শক্তি প্রান্ত হয় তাকে স্থিতিশক্তি বা বিভব শক্তি বলে।

(২) কোন বস্তুর বিভিন্ন অংশের পরিবর্তনের দরুন অথবা পারিপার্শ্বিক সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থানের দরুন বস্তু যে শক্তি প্রাপ্ত হয় তাকে ঐ বস্তুর স্থিতিশক্তি বা বিভব শক্তি বলে। 

যেমন ছাদের উপর রক্ষিত একখণ্ড ইট, পানির ট্যাংকে রক্ষিত পানি ইত্যাদি কম-বেশি শক্তি প্রাপ্ত হয়। এরূপ সকল শক্তিই স্থিতিশক্তি। স্থিতিশক্তির আরও কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে দেয়া হল :

চিত্র : ৬.১০

 

(ক) খেলনার মোটর গাড়িতে স্প্রিং লাগানো থাকে [চিত্র ৬:১০]। এই স্প্রিং-এ দম দিলে তা আকারে ছোট হয়। এই আকার পরিবর্তনের জন্য আমরা কাজ করি যা স্থিতিশক্তিরূপে স্প্রিং-এ সঞ্চিত হয়। দম ছেড়ে দিলে স্প্রিং-এর প্যাচ খুলে পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। স্প্রিং-এর সাথে খেলনার চাকা লাগানো থাকে। ফলে চাকা ঘুরতে থাকে অর্থাৎ স্প্রিং স্থিতি শক্তির দরুন গাড়ি চালাতে কাজ করে।

(খ) হাত ঘড়িতে স্থিতিস্থাপক স্প্রিং-এর সাথে ঘড়ির চাকা যুক্ত থাকে [চিত্র ৬১০ ]। এই স্প্রিং-এ দম দিলে তা আকারে ছোট হয়। এই আকার পরিবর্তন তথা দম দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করি যা স্প্রিং-এর মধ্যে স্থিতিশক্তিরূপে সঞ্চিত হয়। স্প্রিং-এর সাথে ঘড়ির কাঁটার এমন একটি সংযোগ থাকে যে স্প্রিং প্যাঁচ খুলে উল্টা দিকে ঘুরে আগের অবস্থায় ফিরে আসার সময় ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে থাকে। স্প্রিং-এর স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে পরিণত হয়।

এরূপ ধনুকের ছিলাতে তীর লাগিয়ে টানলে, ধাতব পাতকে বাঁকালে, রবারকে প্রসারণ করলে সকলেই আকার পরিবর্তনের জন্য স্থিতিশক্তি লাভ করে।

(গ) উচ্চে অবস্থিত পানিতে, পাহাড়ের চূড়ায় বরফে এবং আকাশের মেঘে অবস্থান পরিবর্তনের জন্য স্থিতিশক্তি সঞ্চিত থাকে।

 

স্থিতিশক্তির পরিমাপ

(Measurement of P. E. )

        কোন একটি বস্তু বর্তমান অবস্থা হতে অন্য কোন স্বাভাবিক বা প্রমাণ অবস্থানে আসতে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে তাই স্থিতিশক্তির পরিমাপ ।

 

স্থিতিশক্তির প্রকারভেদ 

(Types of potential energy)

স্থিতিশক্তি বা বিভব শক্তি বিভিন্ন প্রকার, যথা : 

(১) অভিকর্ষীয় স্থিতিশক্তি বা অভিকর্ষীয় বিভব শক্তি (Gravitational potential energy) 

(২) স্থিতিস্থাপক বিভব শক্তি (Elastic potential energy)

(৩) তড়িৎ বিভব শক্তি (Electric potential energy)_

 

৬:১৩ অভিকর্ষীয় স্থিতি শক্তি বা বিভব শক্তি

কোন একটি বস্তুকে অভিকর্ষের বিরুদ্ধে উপরে তুলতে বাইরের কোন উৎস বা এজেন্টের প্রয়োজন হয়। এই কাজ বস্তুর মধ্যে স্থিতিশক্তি বা বিভব শক্তি হিসেবে সঞ্চিত থাকে। এর নাম অভিকর্ষীয় বিভব শক্তি। এক্ষেত্রে ভূ- পৃষ্ঠকে প্রমাণ্য তল (reference level) হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এখন শক্তির পরিমাপ করা যাক-

ক্যালকুলাস পদ্ধতি : 

মনে করি m ভরের একটি বস্তুকে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে অতি ক্ষুদ্র উচ্চতা dh পর্যন্ত উঠানো হল। এতে কৃত কাজ

চিত্র : ৬.১১

dw=F·dh

বা, dw = Fdh

এখানে F = বাহ্যিক উৎস কর্তৃক প্রযুক্ত বল এবং F ও dh-এর মধ্যবর্তী কোণ শূন্য ।

একটি বস্তুকে উপরে উঠাতে হলে এর ওজনের সমপরিমাণ বল উপর দিকে প্রয়োগ করতে হবে। 

প্রযুক্ত বল, F = বস্তুর ওজন = mg

সুতরাং, বস্তুটিকে h উচ্চতায় A স্থানে উঠাতে হলে  মোট কৃত কাজের পরিমাণ সমীকরণ (25)-এ প্রদত্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজের সমষ্টির সমান।

অভিকর্ষীয় বিভব শক্তি = বস্তুটিকে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে h উচ্চতায় তুলতে মোট কৃত কাজ।

P.E=0hFdh=0hmgdh

স্বল্প উচ্চতার জন্য g-এর মান ধ্রুব ধরে আমরা লিখতে পারি,

P.E=mg0hdh=mghh0=mgh0=mgh

অর্থাৎ অভিকর্ষীয় বিভব শক্তি

   P.E. = mgh

          = ভর x অভিকর্ষীয় ত্বরণ × উচ্চতা

উল্লেখ্য বস্তু যতই নিচে নামতে থাকবে h-এর মান ততই কমবে এবং অভিকর্ষীয় বিভব শক্তিও কমতে থাকবে। ভূ-পৃষ্ঠে h = শূন্য হওয়ায় অভিকর্ষীয় বিভব শক্তি শূন্য হবে।

কোন বস্তুর অভিকর্ষীয় বিভব শক্তির মান প্রামাণ্য তলের সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থানের উপরে নির্ভর করে। সমুদ্র পৃষ্ঠকে প্রামাণ্য তল বিবেচনা করে কোন অবস্থানের বিভব শক্তি এবং কোন উঁচু পাহাড়ের চূড়া প্রামাণ্য তল বিবেচনা করলে ঐ একই অবস্থানের বিভব শক্তি এক হবে না, ভিন্নতর হবে। প্রকৃতপক্ষে কোন স্থানের বিভব শক্তির পরম মান নির্ণয় করা যায় না, বিভব প্রমাণ তল বা প্রসঙ্গ তল সাপেক্ষে বিভব শক্তির পরিবর্তন নির্ণয় করা হয়।

বিভব শক্তির মান ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক উভয়ই হতে পারে। এটা নির্ভর করে প্রসঙ্গ বা প্রামাণ্য তলের উপরে। ভূ-পৃষ্ঠকে প্রামাণ্য তল বিবেচনা করলে উপরের দিকে বিভব শক্তি ধনাত্মক হবে আবার ভূগর্ভে বা খনিতে বিভব শক্তি ঋণাত্মক হবে।

 

৬.১৪ স্থিতিস্থাপক বিভব শক্তি

স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে একটি বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করা হলে বস্তুর বিকৃতি ঘটে। -বিকৃতি ঘটাতে বস্তুর উপর কাজ সাধিত হয়। এই কাজ বস্তুর মধ্যে স্থিতি বা বিভব শক্তি হিসেবে সঞ্চিত থাকে। এর নাম স্থিতিস্থাপক বিভব শক্তি।

নিম্নে স্প্রিং-এর বিভব শক্তি আলোচনা করা হল।

স্প্রিং-এর বিভব শক্তি ঃ ধরি একটি অনুভূমিক আদর্শ স্প্রিং-এর এক প্রান্ত দেওয়ালের সাথে আটকানো এবং অপর প্রান্তে । ভরবিশিষ্ট একটি বস্তু যুক্ত আছে। বস্তুটি অনুভূমিক ও ঘর্ষণহীন তলের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারে [চিত্র ৬-১২]। বস্তুটিকে টেনে স্প্রিংটি দৈর্ঘ্য বরাবর বিকৃত করলে স্থিতিস্থাপক ধর্মের দরুন প্রযুক্ত বলের বিপরীতে স্প্রিং-এ প্রত্যায়নী বলের উদ্ভব ঘটবে।

চিত্র : ৬.১২

 

F অনুভূমিক বল প্রয়োগে বস্তুটিকে বাম হতে ডানদিকে “দৈর্ঘ্য অনুভূমিক বরাবর তার দৈর্ঘ্য x পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে স্প্রিং-এ-kx পরিমাণ প্রত্যায়নী বা উৎপন্ন হবে। এখন বস্তুটিকে x দূরত্ব সরাতে তার উপর এর সমান ও বিপরীতমুখী F = kx বল প্রয়োগ করে কাজ করতে হবে। এই সম্প্রসারণে প্রযুক্ত বল দ্বারা কৃত কাজই হবে বস্তুটির মধ্যে সঞ্চিত বিভব শক্তি।

সুতরাং বিভব শক্তি, U=0xFdx=0xkx dx

  =k0xxdx=12kx2x0=12kx2

স্প্রিটিকে দৈর্ঘ্য x পরিমাণ সংকুচিত করলেও সঞ্চিত বিভব শক্তি 12kx2 হবে।

৬.১৫ শক্তির রূপান্তর

মহাবিশ্ব জুড়ে শক্তি বিভিন্ন রূপে বিরাজিত। বিভিন্ন প্রকার শক্তি পরস্পরের সাথে সম্বন্ধযুক্ত। এক শক্তিকে অন্য শক্তিতে রূপান্তর সম্ভব। এর নামই শক্তির রূপান্তর (Transformation of energy)। 

শক্তি রূপান্তরের কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে প্রদত্ত হল।

(১) পানি উচ্চ স্থান হতে নিম্ন স্থানে প্রবাহিত হয়। উচ্চ স্থানে থাকার সময় তার শক্তি স্থিতিশক্তি। নিম্ন স্থানে প্রবাহিত হবার সময় স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই গতিশক্তির সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয়। অর্থাৎ যান্ত্রিক শক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হল।

(২) বিদ্যুৎ শক্তি যখন বৈদ্যুতিক বাতির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন আমরা আলো পাই। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ শক্তি আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হল।

(৩) বৈদ্যুতিক ইস্ত্রিতে তড়িৎ বা বিদ্যুৎ চালনা করে তাপ উৎপন্ন করা হয়। এই তাপের সাহায্যে কাপড়-চোপড় ইস্ত্রি করা হয়। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ শক্তি তাপ শক্তিতে এবং তাপ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হল।

বৈদ্যুতিক পাখার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে পাখা ঘুরতে থাকে। এ স্থলেও বৈদ্যুতিক শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হল।

(৪) একটি কাঁচা লোহার উপর অন্তরীত (insulated) তামার তার জড়িয়ে বিদ্যুৎ চালনা করলে লোহার পাতটি চুম্বকে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ শক্তি চুম্বক শক্তিতে রূপান্তরিত হল। 

(৫) ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, রুবিডিয়াম প্রভৃতি ধাতুর উপর আলো পড়লে ইলেকট্রন নির্গত হতে দেখা যায়। ফটো-ইলেকট্রিক কোষ এই নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এরূপ একটি কোষে আলো ফেলে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে আলোক শক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হল। 

(৬) দুই হাতের তালু পরস্পরের সাথে ঘষলে তাপ উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে যান্ত্রিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হল।

(৭) ফটোগ্রাফিক ফিল্মের উপর আলোক সম্পাত করে রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে আলোক চিত্র তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে আলোক শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হল।

(৮) ওষুধের কারখানায় শ্রবণোত্তর বা শব্দোত্তর তরঙ্গের সাহায্যে জীবাণু ধ্বংস করা হয় এবং কপূরকে পানিতে দ্রবণীয় করা হয়। এ ছাড়া শব্দোত্তর তরঙ্গ দ্বারা বস্ত্রাদির ময়লাও পরিষ্কার করা হয়। এসব ক্ষেত্রে শব্দ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হন।

(৯) আমরা জানি বৈদ্যুতিক ঘণ্টা বিদ্যুতের সাহায্যে চলে। টেলিফোনও বিদ্যুতের সাহায্যে চলে। দুই ক্ষেত্রেই আমরা শব্দ শুনতে পাই। এস্থলে বিদ্যুৎ শক্তি শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হল।

(১০) কয়লা পোড়ালে তাপ উৎপন্ন হয়। রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে এটি ঘটে। এক্ষেত্রে রাসায়নিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হল।

(১১) বিদ্যুৎ কোষে রাসায়নিক দ্রব্যের বিক্রিয়ার ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে রাসায়নিক শক্তি তড়িৎ বা বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হল।

শক্তি যখন একরূপ হতে অন্যরূপে পরিবর্তিত হয় তখন এর কোন ঘাটতি বা বাড়তি ঘটে না। অর্থাৎ শক্তির বিনাশ ও সৃষ্টি উভয়ই অসম্ভব। যখন এক প্রকার শক্তি বিলুপ্ত হয় তখন তা অন্যরূপে কোথাও আত্মপ্রকাশ করে। এর নাম শক্তির নিত্যতা বা শক্তির অবিনশ্বরতা (Conservation of Energy)। এ সম্পর্কে একটি সূত্র বা বিধি আছে। এর নাম শক্তির নিত্যতা সূত্র বা শক্তির নিত্যতা বিধি। একে শক্তির সংরক্ষণ সূত্রও বলা হয়।

 

Content added || updated By

যান্ত্রিক শক্তির নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র

এই সূত্রানুসারে “শক্তি অবিনশ্বর । এর সৃষ্টি বা বিনাশ নেই। এটি কেবল একরূপ হতে অন্য এক বা একাধিক রূপে পরিবর্তিত হতে পারে। রূপান্তরের আগে ও পরে মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট এবং অপরিবর্তনীয়।” একে শক্তির অবিনাশিতাবাদও বলা হয়।

প্রমাণ (Proof) : নিম্নের দৃষ্টান্ত দ্বারা শক্তির নিত্যতা সূত্র প্রমাণিত হয়।

 

চিত্র : ৬.১৩

(ক) পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে : “বিনা বাধায় উচ্চ হতে নিম্নে পড়ন্ত হয়। বস্তুর যে কোন মুহূর্তে স্থিতিশক্তি এবং গতিশক্তির সমষ্টি সমান।”

 মনে করি 'm' ভরবিশিষ্ট একটি বস্তুকে পৃথিবী পৃষ্ঠের A বিন্দু হতে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে খাড়া । উচ্চতায় উঠিয়ে B বিন্দুতে স্থাপন করা হল। B বিন্দুতে থাকাকালীন বস্তুর সমস্ত শক্তিই স্থিতিশক্তি।

এখন B বিন্দুতে বস্তুর স্থিতিশক্তি, P. EB = mgh

B বিন্দুতে বস্তুর গতিশক্তি, K. EB = 0

B বিন্দুতে বস্তুর মোট যান্ত্রিক শক্তি = স্থিতিশক্তি + গতিশক্তি

= P.EB + K.EB = mgh + 0 = mgh

বস্তুটিকে B বিন্দু হতে ছেড়ে দিলে তা অভিকর্ষ বলের প্রভাবে নিচে নামতে থাকবে। বস্তুটি যতই নিচে নামবে ততই তার বেগ বৃদ্ধি পাবে অর্থাৎ স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হবে। বিনা বাধায় পড়লে বস্তু যে পরিমাণ স্থিতিশক্তি হারাবে ঠিক সমপরিমাণ গতিশক্তি লাভ করবে। ফলে সর্বত্র স্থিতিশক্তি ও গতিশক্তির সমষ্টি সমান থাকবে।

ধরি t সময় পর বস্তুটি x দূরত্ব অতিক্রম করে C বিন্দুতে এল। C বিন্দুতে বস্তুর স্থিতিশক্তি ও গতিশক্তি দুই-ই থাকবে। কারণ তা এখনও মাটি হতে উপরে আছে এবং তা কিছু বেগ প্রাপ্ত হয়েছে।

C বিন্দুতে স্থিতিশক্তি, P. Ec = ভর x অভিকর্ষীয় ত্বরণ x উচ্চতা = mg (h-x)

C বিন্দুতে গতিশক্তি, K. Ec12 mv212m (v02 + 2gx)

12m × 2gx =mgx

C বিন্দুতে বস্তুর মোট যান্ত্রিক শক্তি = স্থিতিশক্তি + গতিশক্তি = P. Ec + K.Ec

= mg (h-x)+mgx

=mgh-mgx+mgx = mgh

সমীকরণ (28) এবং (29) হতে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি যে,

P. EB+K. EB =P. Ec+K. Ec= mgh

অর্থাৎ অভিকর্ষ বলের প্রভাবে মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর মোট শক্তির পরিমাণ একটি ধ্রুব রাশি। অতএব ান্ত্রিক শক্তির নিত্যতা সূত্র প্রমাণিত হল।

বস্তু যতই নিচে নামবে ততই তার স্থিতিশক্তি হ্রাস পাবে এবং গতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু তাদের যোগফল সর্বদা স্থির থাকবে। বস্তুটি যখন মাটি স্পর্শ করবে তখন স্থিতিশক্তি এবং গতিশক্তি উভয়েই লোপ পেয়ে তাপ শক্তি, শব্দ শক্তি, যান্ত্রিক শক্তি প্রকৃতিতে রূপান্তরিত হবে।

উল্লেখ্য : 

বাধাহীন পথে এবং স্থিরাবস্থা হতে পড়ন্ত বস্তু প্রথম সেকেণ্ডে 12mg,2  দ্বিতীয় সেকেণ্ডে 32mg2, তৃতীয় সেকেন্ডে 52mg2……………. ..t-তম সেকেন্ডে 12mg2 (2t – 1) পরিমাণ স্থিতিশক্তি হারাবে এবং সমপরিমাণ গতিশক্তি লাভ করবে; কেননা St =  (2t-1)2g এবং t- তম সেকেন্ডে হারানো স্থিতিশক্তি = mg x St12mg2 (2t - 1)। 

(খ) আনত তল বরাবর গতিশীল বস্তুর ক্ষেত্রে : 

ধরা যাক ভূমি AFE-এর সাথে θ কোণে আনত একটি মসৃণ তল AB-এর উপর B বিন্দুতে m ভরের একটি বস্তু রাখা আছে এবং AFE হতে বস্তুটির উচ্চতা BE=h  চিত্র ৬.১৪ ]। তা হলে B বিন্দুতে বস্তুর  স্থিতিশক্তি = mg x BE = mgh ও B বিন্দুতে বস্তুর গতিশক্তি = 0 ( V0 = 0 )

চিত্র : ৬.১৪

এখন ধরা যাক বস্তুটি ছেড়ে দেয়ায় তা B বিন্দু হতে তল বরাবর x দূরত্ব অতিক্রম করার পর C বিন্দুতে পৌঁছল এবং C বিন্দুতে বস্তুর বেগ V হল। ধরা যাক 

CD || AFE এবং CF = y |

বর্ণনা অনুসারে আনত তল বরাবর বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল বল 

 = mg cos (90° - θ) = mg sin θ

  ত্বরণ a = g sin θ এবং সরণ = x

C বিন্দুতে বস্তুর স্থিতিশক্তি = mg x CF = mgy =mg (BE – BD) = mg (h - x sin θ ) 

C বিন্দুতে বস্তুর গতিশক্তি = 12 mv212 m x 2gx sinθ=mgx sin θ

সুতরাং C বিন্দুতে বস্তুর মোট শক্তি = স্থিতিশক্তি + গতিশক্তি

    = mg (h-x sin θ) + mgx sin θ

= mgh

B বিন্দুতে বস্তুর মোট শক্তি = C বিন্দুতে বস্তুর মোট শক্তি। সুতরাং প্রমাণিত হল যে, আনত তল বরাবর গতিশীল বস্তুর মোট শক্তি সর্বদা একই থাকে।

উল্লেখ্য ঃ 

তল বরাবর x পরিমাণ সরণে কৃত কাজ = mgx sin θ = 1ng × BD = ওজন × আদি ও অন্ত অবস্থানের মধ্যে (উল্লম্ব) উচ্চতা।

(গ) আন্দোলিত সরল দোলকের ক্ষেত্রে ঃ 

ধরা যাক একটি সরল দোলকের কার্যকর দৈর্ঘ্য = OA, দোলক পিণ্ডের ভর m, কৌণিক বিস্তার, দোলনের সর্বোচ্চ বিন্দু B বা D এবং সর্বনিম্ন বিন্দু A । চিত্র ৬:১৫ ]।

চিত্র : ৬.১৫

দোলক B অথবা D বিন্দুতে পৌঁছালে তা মুহূর্তের জন্য স্থির অবস্থায় থাকবে এবং যতই D অথবা B হতে A-এর দিকে যাবে তার বেগ ততই বৃদ্ধি পাবে। সর্বনিম্ন বিন্দু A অতিক্রম করার সময় দোলকের বেগ সর্বাধিক হবে। সুতরাং B অথবা D বিন্দুতে দোলকের সমস্ত শক্তি স্থিতিশক্তি এবং A বিন্দুতে দোলকের সমস্ত শক্তি গতিশক্তি। দোলক যত B অথবা D হতে A-এর দিকে যাবে তার স্থিতিশক্তি তত গতিশক্তিতে এবং দোলক A হতে যত B অথবা D-এর দিকে যাবে তার গতিশক্তি তত স্থিতিশক্তিতে রূপান্তরিত হবে।

ধরা যাক দোলকটি OB অবস্থিতি হতে কোন এক মুহূর্তে OC অবস্থিতিতে পৌঁছল এবং OC অবস্থিতিতে দোলকটির বেগ হল। OA-এর উপর BP ও CQ লম্ব হলে বর্ণনা অনুসারে, A বিন্দুর সাপেক্ষে OB অবস্থিতিতে দোলকের স্থিতিশক্তি = mg x AP

OB অবস্থিতিতে দোলকের গতিশক্তি = 0

OB অবস্থিতিতে দোলকের মোট শক্তি = স্থিতিশক্তি + গতিশক্তি

=mg x AP + 0 = mg x AP

আবার OC অবস্থিতিতে দোলকের স্থিতিশক্তি = mg x AQ OC অবস্থিতিতে দোলকের গতিশক্তি =12mv2 12m ×2g × PQ = mg × PQ

   = mg x (AP-AQ)

OC অবস্থিতিতে দোলকের মোট শক্তি = স্থিতিশক্তি + গতিশক্তি

   = mg x AQ+mg x(AP-AQ) =mg AP

         OB অবস্থিতিতে দোলকের মোট শক্তি = OC অবস্থিতিতে দোলকের মোট শক্তি। সুতরাং প্রমাণিত হল আন্দোলিত দোলকের অনুসৃত পথের যে কোন অবস্থিতিতে তার মোট শক্তির পরিমা সর্বদা একই থাকে।

উল্লেখ্য : OA অবস্থিতিতে দোলকের বেগ Vm হলে, Vm ই সর্বোচ্চ বেগ।

  OA অবস্থিতিতে তার মোট শক্তি = 12mv2m

শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুসারে, 12 mv2m = mg × AP

কিন্তু, AP = OA – OP = OA - OB

কাজেই, 12mv2m = mg x 2l sin2 (α / 2 )

গতিশক্তি ও বিভব শক্তির মধ্যে পার্থক্য :

গতিশক্তিবিভব বা স্থিতি শক্তি
১। কোন একটি গতিশীল বস্তু গতির জন্য যে শক্তি লাভ করে তাকে ঐ বস্তুর গতি শক্তি বলে ।১। নির্দিষ্ট অবস্থানে বা স্থিতিশীল অবস্থায় কোন বস্তুর মধ্যে যে পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত থাকে, তাকে ঐ বস্তুর বিভব শক্তি বলে।
২। বস্তু স্থিতিতে আসার পূর্ব মূহূর্ত যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে তা দ্বারা গতিশক্তি পরিমাপ করা হয়।২। বস্তু এক অবস্থান হতে অন্য অবস্থানে আসতে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে তা দ্বারা বিভব গতিশক্তির পরিমাপ করা হয়।
৩।  গতিশক্তির সমীকরণ হল -12 mv2৩।  অভিকর্ষীয় বলের ক্ষেত্রে বিভব শক্তির সমীকরণ হল mgh। 
৪। বেগ বৃদ্ধিতে বস্তুর গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় বেগ হ্রাসে বস্তুর গতিশক্তি হ্রাস পায়।৪।উচ্চতা বৃদ্ধিতে বস্তুর বিভব শক্তি বৃদ্ধি পায়। উচ্চতা হ্রাসে বস্তুর বিভব শক্তি হ্রাস পায়
৫। গতি শক্তি একটি স্কেলার রাশি।৫। বিভব শক্তি একটি স্কেলার রাশি।

 

৬.১৭ শক্তির অপচয়

আমরা জানি শক্তি অবিনশ্বর। শক্তি শুধু একরূপ হতে অন্য রূপে রূপান্তরিত হতে পারে ; রূপান্তরের পূর্বে ও পরে মোট শক্তির কোন পরিবর্তন হয় না। লর্ড কেলভিন ( Lord Kelvin) প্রথম উপলব্ধি করেন যে, শক্তি অবিনশ্বর হলেও প্রত্যেক রূপান্তরে কিছু শক্তি এমনভাবে আত্মপ্রকাশ করে যে, তা প্রয়োজনীয় কোন কাজে লাগে না। শক্তির এই অকার্যকর রূপান্তরের নাম শক্তির অপচয়। কোন যন্ত্র হতে কাজ পাবার জন্য ঐ যন্ত্রে শক্তি সরবরাহ করতে হয়। কিন্তু প্রযুক্ত বা প্রদত্ত (input) শক্তি এবং প্রাপ্ত বা লব্ধ (output) শক্তি সমান হয় না। লব্ধ শক্তি কিছু কম হয়। যেমন রেলগাড়ির বাষ্পীয় ইঞ্জিনে তাপ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে পরিণত হয়। কিন্তু যান্ত্রিক শক্তির কিছু অংশ রেলের চাকার এবং বিয়ারিং-এর ঘর্ষণ বল অতিক্রম করতে তাপ শক্তিরূপে নষ্ট হয়। 

মহাবিশ্বে নিয়ত একরূপ শক্তি অন্যরূপ শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। প্রত্যেক রূপান্তরে কিছু না কিছু শক্তি অকার্যকর কাজে ব্যয় হচ্ছে।

৬.১৮ কার্য বা কর্মদক্ষতা

কোন যন্ত্রের কর্মদক্ষতা বলতে কার্যকর শক্তি এবং প্রদত্ত মোট শক্তির অনুপাতকে বুঝায় । একে সাধারণত η (ইটা) দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং সংক্ষেপে দক্ষতাও বলে।

সংজ্ঞানুসারে η = কার্যকর শক্তি/ প্রদত্ত মোট শক্তি

যেমন কোন যন্ত্রের কর্মদক্ষতা 80% বলতে বুঝা যায় যে, 100 একক শক্তি সরবরাহ করলে তার মাত্র 80 একক শক্তি কাজে লাগবে এবং 20 একক শক্তির অপচয় হবে।

'মনে করি কোন যন্ত্রে E1, পরিমাণ শক্তি প্রদান করা হল এবং E2 পরিমাণ শক্তির অপচয় ঘটল।

: - কর্মদক্ষতা, η=E1-E2E1

৬.১৯ সংরক্ষণশীল এবং অসংরক্ষণশীল বল

বল দু'প্রকার যথা ঃ

 (১) সংরক্ষণশীল বল এবং 

(২) অসংরক্ষণশীল বল।

এদের নিম্নলিখিত সংজ্ঞা দেয়া যেতে পারে :

(১) যে বল কোন বস্তুর উপর ক্রিয়া করলে তাকে যে কোন পথে ঘুরিয়ে পুনরায় প্রাথমিক অবস্থানে আনলে বল কর্তৃক কৃত কাজ শূন্য হয় তাকে সংরক্ষণশীল বল বলে। উদাহরণ – অভিকর্ষীয় বল, বৈদ্যুতিক বল, আদর্শ স্প্রিং-এর বিকৃতি প্রতিরোধী বল প্রভৃতি। আর যে বল কোন বস্তুর উপর ক্রিয়া করলে তাকে যে কোন পথে ঘুরিয়ে পুনরায় প্রাথমিক অবস্থানে আনলে ঐ বল কর্তৃক কৃত কাজ শূন্য হয় না তাকে অসংরক্ষণশীল বল বলে। উদাহরণ—ঘর্ষণ বল, সান্দ্র বল প্রভৃতি ।

(২) কোন বলের ক্রিয়া অভিমুখ যদি বস্তুর গতি অভিমুখের উপর নির্ভর না করে তবে ঐ বলই সংরক্ষণশীল বল, আর যদি নির্ভর করে তবে ঐ বল অসংরক্ষণশীল বল।

চিত্র : ৬.১৬

ধরি m ভরের একটি বস্তুকে A বিন্দু হতে উপরে উঠিয়ে B বিন্দুতে স্থাপন করা হল এবং এতে বস্তুটির উল্লম্ব সরণ । হল [চিত্র ৬.১৬]। এই স্থানাস্তর 1নং, 2নং বা 3নং পথে হলেও প্রত্যেক পথের সকল বিন্দুতে অভিকর্ষীয় বল mg খাড়া নিচের দিকে ক্রিয়া করে এবং প্রত্যেক পথে অভিকর্ষীয় বলের ক্রিয়া'রেখা বরাবর বস্তুর সরণ h । এই তিন পথের প্রত্যেক পথে কৃত কাজের পরিমাণ সমান এবং কৃত কাজ W = - mgh। 

আবার বস্তুটিকে A বিন্দু হতে 1নং পথে B বিন্দুতে এনে পুনরায় তাকে B বিন্দু হতে A বিন্দুতে স্থানান্তর করলে, প্রথম স্থানান্তরে অভিকর্ষীয় বলের বিপরীত দিকে সরণ = h ও কৃত কাজ W1 = – mgh এবং দ্বিতীয় স্থানান্তরে অভিকর্ষীয় বলের অভিমুখে সরণ = h ও কৃত কাজ W2 =mgh.

মোট কৃত কাজ, W2+ W1 = mgh + (- mgh) = 0

কাজেই অভিকর্ষীয় বল সংরক্ষণশীল বল এবং এই বল কর্তৃক কৃত কাজ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। সংরক্ষণশীল বলের বৈশিষ্ট্য অনুসারে তার আর একটি সংজ্ঞা দেয়া যায়। যেমন-

 যে বলের ক্রিয়ায় কোন বস্তুকে এক বিন্দু হতে অপর কোন বিন্দুতে নিয়ে যেতে ঐ বল কর্তৃক কৃত কাজ শুধু বিন্দুদ্বয়ের অবস্থানের উপর নির্ভর করে—পথের উপর নির্ভর করে না তাকে সংরক্ষণশীল বল বলে।

আবার ধরি একটি বস্তুকে মসৃণ অনুভূমিক মেঝের উপর দিয়ে ঠেলে A বিন্দু হতে 1নং পথে B বিন্দুতে আনা হল। চিত্র ৬.১৭।। এই ক্ষেত্রে ঘর্ষণ বল বস্তুর গতি অভিমুখের বিপরীতে ক্রিয়া করবে। কাজেই এই স্থানান্তরে ঘর্ষণ বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে; কারণ ঘর্ষণ বল সর্বদাই গতিপ্রতিরোধী বল। গতিপথে একটি ক্ষুদ্র সরণ dx এবং এই সরণ গড় F ঘর্ষণ বলের বিপরীতে সংঘটিত হলে, কৃত কাজ W=- Fdx। 

চিত্র : ৬.১৭

1নং পথে A হতে B পর্যন্ত নিতে মোট কৃত কাজ এরূপ ছোট ছোট কৃত কাজের সমষ্টির সমান ও মোট কৃত কাজ, W1 = - 1 Fdx।  

এখন যদি বস্তুটিকে B হতে 2নং পথে পুনরায় A বিন্দুতে নিয়ে যাওয়া হয় তবে এই ক্ষেত্রেও ঘর্ষণ বল বস্তুর গতিপথের বিপরীতে ক্রিয়া করবে।

কাজেই এই ক্ষেত্রেও কৃত কাজ,  W2=2Fdx

উভয় ক্ষেত্রে কাজ ঘর্ষণ বলের বিরুদ্ধে হওয়ায় উভয় কাজ ঋণাত্মক এবং তাদের যোগফল শূন্য হবে না।

কাজেই ঘর্ষণ বল কর্তৃক কৃত কাজ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। অতএব ঘর্ষণ বল অসংরক্ষণশীল বল। সংরক্ষণশীল ও অসংরক্ষণশীল বল ক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দেখান যায় যে, কোন বস্তুকে অভিকর্ষ বল F-এর বিরুদ্ধে মাটি হতে h উপরে তুলতে কাজের পরিমাণ - Fh । 

এখন তাকে সেখান থেকে ছেড়ে দিলে মাটিতে ফিরে আসতে অভিকর্ষ বল দ্বারা কাজের পরিমাণ হবে + Fh। ।সুতরাং বস্তুর মাটি হতে উপরে উঠার পর আবার মাটিতে ফিরে আসতে অভিকর্ষ বল দ্বারা কাজের পরিমাণ ( — Fh + Fh) শূন্য হবে। সুতরাং অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ রল সংরক্ষণশীল বল। তেমনি বিদ্যুৎ বল, চৌম্বক বল ইত্যাদি সংরক্ষণশীল বল।

অপর পক্ষে, ঘর্ষণের ক্ষেত্রে, ঘর্ষণ বল বস্তুকে চলতে বাধা দেয়। সেজন্যে এর দ্বারা বস্তুর উপর কাজ ঋণ হয়। অতএব ঘর্ষণ বল হল অসংরক্ষণশীল বল ।

৬.২০ সংরক্ষণশীল বল ও অসংরক্ষণশীল বলের মধ্যে পার্থক্য

সংরক্ষণশীল বল ও অসংরক্ষণশীল বলের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য করা যায় :

সংরক্ষণশীল বলঅসংরক্ষণশীল বল
১। সংরক্ষণশীল বল ক্ষেত্রে একটি বস্তুকে যে কোন পথে ঘুরিয়ে পুনরায় প্রাথমিক অবস্থানে আনলে ঐ বল কর্তৃক কৃত কাজ শূন্য হবে।১। অসংরক্ষণশীল বল ক্ষেত্রে একটি বস্তুকে যে কোন পথে ঘুরিয়ে পুনরায় প্রাথমিক অবস্থানে আনলে ঐ বল কর্তৃক কৃত কাজ শূন্য হবে না।
২। সংরক্ষণশীল বলের ক্রিয়া অভিমুখ বস্তুর গতি অভিমুখের উপর নির্ভরশীল নয়।২। অসংরক্ষণশীল বলের ক্রিয়া অভিমুখ বস্তুর গতি অভিমুখের উপর নির্ভরশীল।
৩। সংরক্ষণশীল বল কর্তৃক কৃত কাজ সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।৩। অসংরক্ষণশীল বল কর্তৃক কৃত কাজ সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়।
৪। বস্তুর উপর সংরক্ষণশীল বল কর্তৃক কৃত কাজ গতিপথের প্রাথমিক ও শেষ বিন্দুর উপর নির্ভরশীল।৪। বস্তুর উপর অসংরক্ষণশীল বল কর্তৃক কৃত কাজ শুধু গতিপথের প্রাথমিক ও শেষ অবস্থানের উপর নির্ভরশীল নয়।
৫। সংরক্ষণশীল বলের চার যান্ত্রিক শক্তির নিত্যতার সূত্র পালিত হয়।৫। অসংরক্ষণশীল বলের ক্রিয়ায় যান্ত্রিক শক্তির নিত্যতার সূত্র পালিত হয়। নিত্যতার সূত্র সংরক্ষিত হয় না।

 

Content added || updated By

কোন একটি উৎসের (agent) কাজ করার হারকে ক্ষমতা বলে এবং একক সময়ের কৃত কাজ হারা ক্ষমতা পরিমাপ করা হয়। বলের ক্রিয়ায় বস্তুর সরণ দ্রুত না ধীরে কিভাবে সম্পন্ন হয়েছে কাজের পরিমাণ দ্বারা তা বুঝা যায় না—বুঝা যায় ক্ষমতা দ্বারা।

মনে করি কোন ব্যক্তি বা উৎস সময়ে W পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে। 

একক সময়ের কৃত কাজ বা ক্ষমতা,

P = কাজ/ সময় = wt

Fপরিমিত একটি ধ্রুব বল কোন কণার উপর dt সময় ক্রিয়া করে dr সরণ ঘটালে, ঐ ধ্রুব বল কর্তৃক উক্ত সময়ে কৃত কাজ, dW=Fdr

কণাটির উপর ঐ মুহূর্তে প্রযুক্ত ক্ষমতা, P=dwdt=F.drdt

কাজেই ঐ মুহূর্তের বেগ, v হলে drdt=v ও P=Fvক্ষমতা স্কেলার রাশি।

ক্ষমতার একক (Unit of power)

ক্ষমতার সংজ্ঞা হতে এর একক বের করা যায়।

ক্ষমতা = কাজ/সময় =জুল/সেকেন্ড (J/S)

এস. আই. বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে ক্ষমতার একক জুল/সে. বা ওয়াট ( watt)। 

এক সেকেন্ডে এক জুল কাজ করার ক্ষমতাকে এক জুল/সে, বা এক-ওয়াট বলে। 

“কোন যন্ত্রের ক্ষমতা 50 জুল/সে.।”—উক্ত উক্তি দ্বারা বুঝি যন্ত্রটি প্রতি সেকেন্ডে 50 জুল কাজ করতে পারে।

ওয়াট অপেক্ষা বড় মানের আরও একটি একক ক্ষমতা প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর নাম কিলোওয়াট (K. W.)। 

অশ্ব ক্ষমতা : প্রতি সেকেন্ডে 746 জুল কাজ করার ক্ষমতাকে এক অশ্ব-ক্ষমতা বলে।

1 অশ্ব-ক্ষমতা = 746 জুল/ সে. - 746 ওয়াট (Watt)।

(খ) বৈদ্যুতিক ব্যবহারিক একক : ক্ষমতার বৈদ্যুতিক ব্যবহারিক একককে ওয়াট (Watt) বলে ।

'ওয়াট' পরিমাপের আস্তর্জাতিক পদ্ধতিতেও ক্ষমতার একক।

= 1 জুল/সে: 1. ওয়াট

 1 কিলোওয়াট = 1000 ওয়াট। অর্থাৎ কিলোওয়াট ওয়াট অপেক্ষা এক হাজার গুণ বড়। আধুনিক কালে কিলোওয়াট অপেক্ষা হাজার গুণ বড় অর্থাৎ ওয়াট অপেক্ষা দশ লক্ষ গুণ বড় ক্ষমতার আর একটি একক ব্যবহৃত হচ্ছে। এর নাম মেগাওয়াট (Mega watt)।

1 মেগাওয়াট (MW) = 1000 কিলোওয়াট

‘কোন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ক্ষমতা 2 মেগাওয়াট'। এর অর্থ—কেন্দ্রের সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ শক্তি দ্বারা প্রতি সেকেন্ডে 2 x 106 জুল বা 2 মেগা -জুল কাজ করা যায়। 

ক্ষমতার মাত্রা সমীকরণ (Dimension of power)

আমরা জানি, 

ক্ষমতা, P=Wt

ক্ষমতার মাত্রা সমীকরণ, [P] = [বল][সরণ]/[সময় ]

 

 

৬'২২ কাজ ও ক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য

কাজ ও ক্ষমতার মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য রয়েছে :

কাজক্ষমতা 
১। বল প্রয়োগে সরণ ঘটলে বল এবং বলের দিকে সরণের অংশকের গুণফলকে কাজ বলে।

১। কোন একটি উৎসের কাজ করার হারকে

ক্ষমতা বলে।

২। কাজের মাত্রা = ২। ক্ষমতার মাত্রা = 
৩। কাজ ঋণাত্মক ও ধনাত্মক উভয় প্রকারের হতে পারে।৩। ক্ষমতার কোন রকমের নেই।
৪। কাজ পরিমাপে সময়ের প্রয়োজন হয় না।৪। ক্ষমতার পরিমাপে সময়ের প্রয়োজন
৫। কাজের একক জুল।৫। ক্ষমতার একক ওয়াট।

 

Content added || updated By

শক্তি ও ক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য

শক্তি ও ক্ষমতার মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য রয়েছে :

শক্তিক্ষমতা
১। কোন বস্তুর কাজ করার সামর্থ্য বা সক্ষমতাকে এর শক্তি বলে।১। কোন বস্তুর কাজ করার হারকে ক্ষমতা বলে।
২। মোট কৃত কাজ দ্বারা শক্তি পরিমাপ করা হয়। তাই শক্তি নির্ণয়ে সময়ের প্রয়োজন হয় না ।২। একক সময়ের কাজ দ্বারা ক্ষমতা পরিমাপ করা হয়। তাই ক্ষমতা নির্ণয়ে সময়ের প্রয়োজন হয়।
৩। শক্তির রূপান্তর ঘটে।৩। ক্ষমতার রূপান্তর নেই ।
৪। শক্তির একক = কাজের একক = জুল।৪। ক্ষমতার একক =কাজের একক/সময়ের একক
৫। শক্তির মাত্রা সমীকরণ =  ৫। ক্ষমতার মাত্রা সমীকরণ = 

 

Content added || updated By

সরল ছন্দিত গতির শক্তি

সরল ছন্দিত গতির শক্তি

সরল ছন্দিত গতি (Simple Harmonic Motion) একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা পদার্থবিজ্ঞানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যখন কোনো বস্তু একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর চারপাশে এমনভাবে দোলন করে যে, ত্বরণ সর্বদা সাম্যাবস্থান থেকে সরণের সমানুপাতিক এবং বিপরীতমুখী হয়, তখন তাকে সরল ছন্দিত গতি বলে।

সরল ছন্দিত গতিতে শক্তি:

এই ধরনের গতিতে দুই ধরনের শক্তি থাকে:

গতিশক্তি (Kinetic Energy):

  • যখন বস্তু সাম্যাবস্থান থেকে সরে যায় তখন এর বেগ থাকে। এই বেগের কারণে বস্তুতে একটি গতিশক্তি থাকে।
  • সাম্যাবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দূরত্বে (বিস্তারে) গেলে বস্তুর বেগ শূন্য হয় এবং গতিশক্তিও শূন্য হয়।
  • সাম্যাবস্থানে গেলে বেগ সর্বোচ্চ হয় এবং গতিশক্তিও সর্বোচ্চ হয়।

বিভব শক্তি (Potential Energy):

  • সরল ছন্দিত গতিতে সাধারণত একটি স্প্রিং বা গুরুত্বের বলের কারণে বিভব শক্তি জড়িত থাকে।
  • সাম্যাবস্থান থেকে যত দূরে যাওয়া হয়, তত বেশি বিভব শক্তি জমা হয়।
  • সাম্যাবস্থানে বিভব শক্তি শূন্য হয়।
  • সর্বোচ্চ বিস্তারে গতিশক্তি শূন্য হলে সমস্ত শক্তি বিভব শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

মোট শক্তি:

  • সরল ছন্দিত গতিতে মোট শক্তি (গতিশক্তি + বিভব শক্তি) সর্বদা ধ্রুবক থাকে। অর্থাৎ, যখন গতিশক্তি বাড়ে, তখন বিভব শক্তি কমে যায় এবং এর বিপরীতও সত্য।

শক্তির রূপান্তর:

  • সরল ছন্দিত গতিতে শক্তি ক্রমাগত গতিশক্তি থেকে বিভব শক্তিতে এবং বিভব শক্তি থেকে গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
Content added By

কাজ : 

কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগে সরণ ঘটলে প্রযুক্ত বল ও বলের অভিমুখে সরণের উপাংশের গুণফলকে কাজ বলে।

 বলের দ্বারা কাজ : 

যদি বল প্রয়োগের ফলে বলের দিকে বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ ঘটে বা বলের দিকে সরণের ধনাত্মক উপাংশ থাকে তবে ঐ সরণের জন্য কৃত কাজকে বলের দ্বারা কাজ বলে। 

বলের বিরুদ্ধে কাজ ঃ 

যদি বল প্রয়োগের ফলে বলের বিপরীত দিকে বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ ঘটে বা বলের দিকে সরণের ঋণাত্মক উপাংশ থাকে তবে ঐ সরণের জন্য কৃত কাজকে বলের বিরুদ্ধে কাজ বলে।

এক জুল : 

এক নিউটন বল প্রয়োগের ফলে বলের ক্রিয়া রেখা বরাবর বস্তুর সরণ যদি এক মিটার হয়, তবে যে কাজ সম্পন্ন হয় তাকে এক জুল বলে।

এক ইলেকট্রন ভোল্ট : 

এক ভোল্ট বিভব পার্থক্যে একটি ইলেকট্রনের অর্জিত শক্তিই এক ইলেকট্রন ভোল্ট। শক্তি : কোন ব্যক্তি, বস্তু বা পদার্থের কাজ করার সামর্থ্য বা ক্ষমতাকে শক্তি বলে।

যান্ত্রিক শক্তি : 

কোন বস্তুর মধ্যে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা অবস্থানের সাপেক্ষে অথবা গতির জন্য কাজ করার সামর্থ্য তথা শক্তি থাকে, তবে ঐ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তি বলে। 

গতিশক্তি : 

গতিশীল অবস্থা থাকার ফলে কোন একটি বস্তু কাজ করার জন্য যে সামর্থ্য অর্জন করে তাকে ঐ বস্তুর গতিশক্তি বলে। অথবা, গতির জন্য বস্তুতে যে শক্তির উদ্ভব হয় তাকে তার গতিশক্তি বলে। 

স্থিতিশক্তি : 

নির্দিষ্ট অবস্থানে বা অবস্থায় স্থিতিশীল থাকার দরুন বস্তু যে শক্তি প্রাপ্ত হয় তাকে স্থিতিশক্তি বলে।

কাজ শক্তি উপপাদ্য : 

কোন বস্তুর উপর ক্রিয়ারত লখি বল কর্তৃক কৃত কাজ তার গতিশক্তির পরিবর্তনের সমান। এটি কাজ শক্তি উপপাদ্য নামে পরিচিত।

যান্ত্রিক শক্তির নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র ঃ 

শক্তির সৃষ্টি বা বিনাশ নেই। এটি কেবল একরূপ হতে অন্য এক বা একাধিক রূপে পরিবর্তিত হতে পারে। রূপান্তরের আগে ও পরে মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়। একে শক্তির নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র বলে।

কার্য বা কর্ম দক্ষতা : 

কোন যন্ত্রের কর্মদক্ষতা বলতে কার্যরত শক্তি এবং প্রদত্ত মোট শক্তির অনুপাতকে বুঝায়। 

সংরক্ষণশীল বল : 

যে বল কোন বস্তুর উপর ক্রিয়া করলে তাকে যে কোন পথে ঘুরিয়ে পুনরায় প্রাথমিক অবস্থানে মানলে বল কর্তৃক কৃত কাজ শূন্য হয় তাকে সংরক্ষণশীল বল বলে।

অসংরক্ষণশীল বল : 

যে বল কোন বস্তুর উপর ক্রিয়া করলে তাকে যে কোন পথে ঘুরিয়ে পুনরায় প্রাথমিক অবস্থানে আনলে ঐ বল কর্তৃক কৃতকাজ শূন্য হয় না তাকে অসংরক্ষণশীল বল বলে। 

ক্ষমতা : 

কোন একটি উৎসের কাজ করার হারকে ক্ষমতা বলে।

এক ওয়াট :

 এক সেকেন্ডে এক ভুল কাজ করার ক্ষমতাকে এক ভুল / সে. বা এক ওয়াট বলে। 

এক অশ্ব ক্ষমতা : 

প্রতি সেকেন্ডে 746 ভুল কাজ করার ক্ষমতাকে এক অশ্ব ক্ষমতা বলে।

 

Content added || updated By
Promotion